রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিঃ তারিখ রোজ সোমবার দুপুর ১২:১৫ ঘটিকায় ‘বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ’ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১ এর ভার্টিকাল এক্সটেনশনের উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন রাবিপ্রবি'র মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান।
রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস-১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ, লালন ও বহন করার প্রত্যয়ে নির্মিত ‘বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ’ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১ এর ভার্টিকাল এক্সটেনশনের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশের অনুষ্ঠানে শুরুতেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে দোয়া করা হয়। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করেন এবং ‘বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ’ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১ এর ভার্টিকাল এক্সটেনশনের উদ্বোধন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ মহোদয় বলেন, একজন সুদক্ষ ভাইস-চ্যান্সেলরের নেতৃত্বে এ বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ, প্রশাসনিক ভবনের ভার্টিকাল এক্সটেনশন, অন্যান্য অবকাঠামোগত যেসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে সবগুলো কাজই খু্ব গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরোও বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় রাঙ্গামাটিকে পৃথিবীর সর্বত্র পরিচয় করিয়ে দেবে এবং যেহেতু রাঙ্গামাটি একটি সৌন্দর্যমন্ডিত পাহাড়ী এলাকা ও টুরিস্ট স্পট সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান রাঙ্গামাটিকে আরো গৌরবময় করে তুলবে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পক্ষ হতে তিনি রাবিপ্রবি’কে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে ধারণ করে সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং এক্ষেত্রে কমিশনের সহযোগিতা ও সদিচ্ছার কোন ঘাটতি থাকবেনা।
মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান বলেন, আজকে এই উদ্বোধন হওয়া বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ যা ১৯৫২, ১৯৭১ এবং ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে মানুষের আত্মত্যাগকে প্রতিফলিত করে; আশা করছি সারা দেশের মানুষের কাছে এটি সমাদৃত হবে । রাবিপ্রবি’র প্রশাসনিক ভবন-১ ইতোমধ্যে নান্দনিকতার জন্য প্রশংসিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে তারা যেকোনো সময় তাদের যৌক্তিক দাবির সমাহার পেশ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একাত্ম হয়ে কাজ করবে। আজকে বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ ও প্রশাসনিক ভবন-১ ঊর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ কাজের জন্য যারা নিরলসভাবে কাজ করেছেন তারাও প্রশংসার দাবিদার।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা গর্বের বিষয় ছিল। আগামী নভেম্বরে মালয়েশিয়ার University of Putra Malaysia (UPM) এর সাথে যৌথভাবে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করতে যাচ্ছে। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকেরা দেখবে যে রাবিপ্রবি এটার কো-অর্গানাইজার। আমরা আশা রাখি ভবিষ্যতে আমাদের শিক্ষার্থীরা রাবিপ্রবির সাথে ইতোমধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়া তুরস্কের আতাতুর্ক বিশ্ববিদ্যালয়সহ নর্থ আমেরিকার বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য গমন করবে।
তিনি আরো বলেন, রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে আমরা ‘ট্যুরিজম হাব’ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে তা অন্তর্ভুক্ত করেছি। সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি অনুষদের জন্য ‘রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন হাব’ হবে এবং আমরা ইতোমধ্যে হাব প্রতিষ্ঠায় প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছি। আমাদের নতুন সময়ের দাবি হবে, আমরা পরস্পরের জন্যে সম্মান, মর্যাদা এবং দায়িত্ববোধের বাংলাদেশ তৈরি করবো; অসম্মান ও শক্তির বাংলাদেশ পরিত্যাগ করবো। তিনি বাংলাদেশকে ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার আহবান জানান।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মৈত্রী রায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীনদের পক্ষে সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের ডীন ড. মুহাম্মদ জামশেদ আলম পাটোয়ারী, বিভাগীয় চেয়ারম্যানগণের পক্ষে ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক ড. নিখিল চাকমা, কর্মকর্তাদের পক্ষে প্রকল্প পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এবং পরিকল্পনা উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জনাব আবদুল গফুর, কর্মচারীদের পক্ষে অর্থ ও হিসাব দপ্তরের হিসাব সহকারী জনাব আসমা আক্তার বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক জনাব মো: নাফিজ মণ্ডল।
সুধী সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব মোহাম্মদ জুনাইদ কবির, সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের ডীন ড. মুহাম্মদ জামশেদ আলম পাটোয়ারী, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডীন ড.মুহাম্মদ রহিম উদ্দিন ও প্রক্টর জনাব সাদ্দাম হোসেন, সকল বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মো: কাউসার, সিএসই বিভাগের বিদর্শন চাকমা, এফইএস বিভাগের সঞ্চিতা চক্রবর্তী, টিএইচএম বিভাগের মেহেরুন নিগার রিমি ও এফএমআরটি বিভাগের রিফা তাসনিয়া নিকিতা বক্তব্য রাখেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, এ বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ আজকের বাংলাদেশ বিনির্মাণে আত্মত্যাগ, ইতিহাস ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে রাবিপ্রবি'কে প্রতিনিধিত্ব করবে এবং চিরন্তন প্রেরণা যোগাবে। তারা বক্তব্যে রাবিপ্রবিকে সেশনজট মুক্ত, নান্দনিকতার ছোঁয়ায় রাঙ্গামাটির ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে সাজানো, গবেষণা ও জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে আধুনিক ও যুগোপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার আহবান জানান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট নিরসনসহ বিবিধ উন্নয়নমূলক কাজ করায় ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়কে শিক্ষার্থীরা ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য যে, ২০ মার্চ ২০২৫ তারিখে বিজয় স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রশাসনিক ভবন-১ এর ভার্টিকাল এক্সটেনশনের কাজ শুরু হয় ।