দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৫’। ১৫ জুলাই ২০২৫ তারিখ সকাল ০৯:০০ ঘটিকায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে দিবসটি উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান। এসময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় ও পায়রা উড়ানো হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার জন্য দোয়া করা হয় এবং আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে প্রশাসনিক ভবন-১ এর সম্মুখে দিবসটি উপলক্ষে কেক কাটা হয়।
এসময়ে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের স্লোগান “রাবিপ্রবি দিবসের অঙ্গীকার, সেশনজট মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আমার অধিকার।” এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসহ সকলকে যথাযথভাবে কাজ করার আহবান জানান। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নিরসনে, প্রয়োজনে আগামী তিন মাসে অতিরিক্ত ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । তিনি আরো বলেন, যেহেতু এই মুহূর্তে আমাদের শিক্ষক সংকট অনেকটাই নিরসন হয়েছে তাই আমরা আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় অতি দ্রুত সেশনজট মুক্ত হবে। তিনি সেশনজট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার মনস্তত্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার আহবান জানান।
‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ উপলক্ষে অন্যান্য কর্মসূচীগুলো হলো: ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, উচ্চ শিক্ষা সংক্রান্ত প্রবন্ধ উপস্থাপন, মেমোরী শোকেজিং, স্পিরিট অব দ্য ডে, ফুড ফেসটিভ্যাল, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ এর কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সকাল ১০:৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-১ এর সভাকক্ষ-২ এ রাবিপ্রবি’র সূচনালগ্ন থেকে এ-পর্যন্ত বিভিন্ন একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের আলোকচিত্র সম্বলিত একটি ডকুমেন্টারি প্রর্দশন করা হয়। ‘A 11 Years Journey of RMSTU: Way Forward’ এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়কে হস্তান্তর করেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সাবেক ডিন ও সহযোগী অধ্যাপক জনাব সূচনা আখতার ও সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের সাবেক ডিন ও সহযোগী অধ্যাপক জনাব ধীমান শর্মা এবং মূল প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন জনাব ধীমান শর্মা।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন Western Norway University of Applied Sciences, Bergen, Norway এর প্রফেসর ড. এস এম আব্দুল কুদ্দুস। তিনি ‘Changing Trends in Higher Education in the Era of Industry 4.0’ এ বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রকৌশল-কারিগরী চাহিদার সাথে কারিকুলামের সমন্বয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি আরো বলেন, এক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের উন্নতির কথা চিন্তা করলে হবে না, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পরিবেশর জীববৈচিত্র্য ঠিক রেখে, সমাজের উপর যেন কোন বিরুপ প্রতিক্রিয়া না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে। তিনি সময় ও প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে শিক্ষাদান-শিক্ষাগ্রহণ পদ্ধতি, কারিকুলামে নতুনত্ব আনয়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কার ও সময়োপযোগী দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেন। তিনি রাবিপ্রবি’র সাথে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমঝোতা স্মারক ( MoU) করার প্রস্তাব রাখেন এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণার বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অতপর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনিযুক্ত একুশ জন শিক্ষককে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর। তাঁরা হলেন- কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জামশেদ আলম পাটোয়ারী ও ড.তৌহিদুল আলম; ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব মোহাম্মদ জুনাইদ কবির ও ড. মুহাম্মদ রহিম উদ্দিন; ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তালেব; ফিশারিজ এন্ড মেরিন রির্সোসেস টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মতিউর রহমান চৌধুরী ও ড. মোঃ মিজানুর রহমান; ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব জি. এম সেলিম আহমেদ; ফিশারিজ এন্ড মেরিন রির্সোসেস টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব আবদুল্লাহ আল মামুন ও জনাব মোঃ ফখরুদ্দিন; ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক জনাব আকসাদুল হাসান রাকিব ও জনাব আরিফ হোসেন; ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের প্রভাষক জনাব মোঃ ছায়েদুল আমিন ও জনাব মোঃ জামাল উদ্দিন; ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক জনাব মোঃ আবদুল হালিম, জনাব ফাহিম হোসেন ও জনাব মোঃ নাফিজ মন্ডল এবং ফিশারিজ এন্ড মেরিন রির্সোসেস টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক জনাব মুহাম্মদ ফররুখ রহমান, জনাব সিফতুন নুর, জনাব মোহাম্মদ এজাজুল ইসলাম ও জনাব কেয়া চাকমা।
এই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে প্রথমবারের মত ডিন’স এওয়ার্ড চালু করা হলো এবং সেলক্ষ্যে নীতিমালাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগমী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে নীতিমালা অনুযায়ী ডিন’স এওয়ার্ড প্রদান করা হবে। শিক্ষার্থীদেরকে ডিন’স এওয়ার্ড অর্জনের জন্য পড়াশোনায় আগ্রহী ও নিজের যোগ্যতা দক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করেন মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে Best Memory Showcasing: Awards (Research, Artistic creation, Innovative Projects) এবং Spirit of the Day-সহ বিভিন্ন ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একাডেমিক ভবন-১ এ বিভিন্ন প্রকারের ঐতিহ্যবাহী খাবার ও পিঠা নিয়ে ফুড ফেস্টিভ্যাল এর আয়োজন করা হয়। দুপুরে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শিক্ষার্থী বনাম শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিকেলে একাডেমিক ভবন-১ এর সভাকক্ষ-২ এ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য ‘রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১’ (৩৯নং আইন, ১৫ জুলাই ২০০১ সাল) দ্বারা রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুমোদন দেয় হয়। ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়।
সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস সফল হওয়ায় ভাইস চ্যান্সেলর শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী-শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান।